মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে তিনি ইরানের রাজধানী তেহরানের সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে শহর ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে লিখেছেন, "তেহরানের সবাইকে অতিসত্বর শহর ছেড়ে যাওয়া উচিত। ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না—এই প্রতিশ্রুতিতে আমরা অনড় থাকবো।"
এদিকে, তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ও পশ্চিমাঞ্চলের দুটি মিসাইল ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পাল্টা হামলায় ইরানও তেল আভিভ, জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বেশ কিছু শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ভোররাতেও ইসরায়েলের বহু শহরে হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে উঠেছে।
কানাডায় থাকাকালীন এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শিগগিরই একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। তিনি বলেন, “আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসার জন্য। ৬১তম দিনে কী হলো—আপনারা নিজেরাই দেখছেন। আমার বিশ্বাস, যদি চুক্তি না হয়, তাহলে ইরান বড় ধরনের ভুল করবে।”
তবে হোয়াইট হাউজের তথ্য অনুযায়ী, সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছেন এবং ওয়াশিংটনে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। সিবিএস নিউজ জানায়, এই বৈঠকে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান উপস্থিত থাকবেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের অভিযানে সরাসরি যোগ দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে কেবলমাত্র ‘সুরক্ষা নিশ্চিতের’ জন্য। সরাসরি কোনো যুদ্ধাভিযানে যুক্ত না হলেও মার্কিন বাহিনী নিজেদের ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির প্রেক্ষাপটে সোমবার দুপুর থেকেই তেহরান শহর ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। শহরের প্রবেশ ও বহির্গমন সড়কে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে রাজধানীর পরিবেশ দিনভর ছিল উত্তপ্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত।
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে চীনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েল ত্যাগ করুন। জর্ডানের সীমান্ত সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।” দূতাবাস আরও সতর্ক করে জানায়, সাধারণ জনগণ ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, সিবিএস নিউজ, ট্রুথ সোশ্যাল, হোয়াইট হাউজ প্রেস ব্রিফিং